ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি বিশেষ অভিযানে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মুজাফফরাবাদ, কোটলি, ভাওয়ালপুর, আহমেদপুর ও বাঘসহ কমপক্ষে নয়টি স্থানে হামলা চালানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এই হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, ভারতের মিসাইল হামলায় কিছু মসজিদেও আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে কোটলি ও আহমেদপুরের দুটি মসজিদে আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও চেকপোস্ট ধ্বংস করার কথাও জানায়। রাতভর কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি চলে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ (ISPR) জানায়, তারা কাশ্মীরের ভারতীয় অংশেও পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই হামলাকে কাপুরুষোচিত উল্লেখ করে বলেন, “বেসামরিকদের লক্ষ্য করে এভাবে হামলা চালানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই হামলাগুলো ছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অবকাঠামো লক্ষ্য করে, কোনো সামরিক স্থাপনায় নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জানায়, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক পর্যটনকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কথার লড়াই, পাল্টা হুমকি ও নানা সামরিক প্রস্তুতি চলছিল।
এই ঘটনার জেরে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে আবারো যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলি ছাড়াও বিমান চলাচল সীমিত, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা এবং সিন্ধু নদ চুক্তি বাতিলের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে উভয় দেশ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে লজ্জাজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।